মোজাহার ইসলাম মোহনপুর প্রতিনিধি
রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলায় বিভিন্ন এলাকায় আলুর বীজ কেনাকাটা শুরু। তবে এই আলুর বীজ নিয়ে তৈরি হয়েছে একটি সিন্ডিকেট। এ কারণে সরকার-নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে আলুর বীজ কিনতে হচ্ছে কৃষকদের। কৃষকদের অভিযোগ, কিছু অতিলোভী ব্যবসায়ীর কারসাজিতে চড়া দামে কিনতে হচ্ছে বীজ আলু।আলুর বীজ পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে বীজ ব্যাবসায়ীদের সিন্ডিকেটে দিশেহারা কৃষক।বাণীজ্যিক উৎপাদন কেন্দ্র থেকে বীজ উত্তোলন করে বিজয় ব্যাবসায়ীরা তাদের নির্ধারিত বিক্রয় কেন্দ্রে না এনে কঠোর গোপনীয়তা রক্ষার মাধ্যমে তাদের দেওয়া রিটেইলারদের ঘরে, নিজ বাড়িতে, তাদের অধীনস্থ কর্মচারিদের বাড়িতেসহ পার্শবর্তি অন্যত্র তাদের ভাড়া করা গোডাউনে অবৈধভাবে মজুদ করছে। ফলে স্থানীয় কৃষকরা আলু বীজের জন্য দিনের পর দিন ব্যাবসায়ীদের দোকানে ভোর রাত থেকে সারাদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করেও বীজ না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন আর অবৈধ মজুমদাকারি বীজ ব্যাবসায়ীরা দিনের পর দিন কৃষকদের কে একই বাণী শুনিয়ে যাচ্ছেন যে, বীজ এসেছিল সব অন্য কৃষকরা নিয়ে গেছে,
এ বিষয়ে কেশরহাট মেসার্স আজিজ সীড আকতার হোসেন, বলেন, ‘ব্র্যাকের বীজ বিক্রি করি। আমি নির্ধারিত যে দাম আমাদের দিয়েছে, সেই দামেই বীজ বিক্রি করছি। কোনো দাম বেশি নিচ্ছি না।’
কতিপয় কিছু অসৎ ডিলার সিন্ডিকেট করে আলু বীজের দাম বেশি নিচ্ছে। এতে আমাদের সুনাম নষ্ট হচ্ছে।আবার কিছু ব্যবসায়ী যাদের লাইসেন্স নেই, তারা সিন্ডিকেট করে বীজের দাম বেশি নিচ্ছেন।একাধিক সূত্রে জানা গেছে, তবে আলুর বীজ কখন কিভাবে ব্যাবসায়ীদের কাছে পৌঁছে তা স্থানীয় কৃষকরা কেউ না জানলেও কালো বাজারে বিক্রির মাধ্যমে পকেট ভরছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের কেউ বা আলু বিক্রি করছেন গভীর রাত থেকে ভোর ৪ টা পর্যন্ত। আবার কেউবা স্টোর থেকেই পার্শবর্তি উপজেলা ও জেলাতে কালোবাজারিদের কাছে অধিক লাভে বিক্রি করছেন। বাংলাদেশের কৃষক বাঁচলে বাঁচবে দেশ, উপজেলায় আলু বীজ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় ও জিম্মি হয়ে পড়েছে আলু উৎপাদনকারী সাধারণ কৃষকরা। আলু বীজের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে তিন থেকে চারগুন বেশি দামে কালোবাজার থেকে বীজ কিনতে বাধ্য হচ্ছেন সাধারন কৃষকরা।
উপজেলার বিভিন্নএলাকার শতাধিক আলু উৎপাদনকারি কৃষকরা জানান, চলতি রোপা-আমন মৌসুমে তাদের উৎপাদিত ধান সমুদয় বিক্রি করেও শুধুমাত্র আলুর বীজ ক্রয়ের টাকা হচ্ছেনা।উপরন্তু আলু উৎপাদনে বীজ ছাড়াও সার, কীটনাশক, সেচসহ লেবার প্রয়োজন। ফলে উপজেলায় বিগত বছরগুলোতে সর্বত্র আলু উৎপাদন হলেও চলতি বছর বীজের কৃত্রিম সংকটের কারণে লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক জমিতে চাষ সম্ভব হবে বলে আশংঙ্কা করা হচ্ছে।উপজেলায় বেশি দামে আলুর বীজ বিক্রির অভিযোগ পেয়ে মোহনপুর উপজেলা প্রশাসন উপজেলায় কৃষকদের সার্থ নির্ধারিত মূল্যে বিক্রয় নিশ্চিত করতে জোরেসোরে মাঠে কাজ করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় উপজেলার আলু বীজ ডিলারদের সতর্কসহ নির্ধারিত মূল্যে সতর্কীকরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) বিকাল সাড়ে চারটার দিকে উপজেলা কৃষি অফিসের আয়োজনে হলরুমে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আয়শা সিদ্দিকা।এ সময় উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিএডিসি’র ডিডি (সীড মার্কেটিং) কেএম গোলাম সারোয়ার, উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান, বিএডিসি জয়েন ডিরেক্টর ফজলে রাব্বি, উপজেলা কৃষি অফিসার কামরুল ইসলাম, অতিরিক্ত কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার আঃ মান্নান, এসএ পিপিও মোস্তফা কামাল, ব্র্যাক টিএসও আমিনুল ইসলাম, ব্র্যাক ডিলার মেসার্স মাহি বীজ ভান্ডার মতিউর রহমান, কেশরহাট মেসার্স আজিজ সীড আকতার হোসেন, মৌগাছি বাজার মেসার্স বাবা ট্রেডার্স ক্বারী রাশেদুল ইসলাম, বিএডিসি ডিলার ধোপাঘাটা বাজার মেসার্স চাষিখুশি বীজ বিতান সাইফুল ইসলামসহ বীজ ডিলারগন। সভায় সতর্কীকরণ বার্তা দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সরকার এবং কোম্পানি নির্ধারিত মূল্য আলু বীজ বিক্রয় করা, প্রান্তিক কৃষকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বীজ বিক্রয়, প্রয়োজনের অতিরিক্ত বীজ সংরক্ষণ করলে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ।এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি অফিসের নিয়মিত বাজার মনিটরিং চলমান থাকবে। বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। বীজ ডিলার কোন সিন্ডিকেট করলে ইউএনও, কৃষি অফিস ও মোহনপুর থানাকে অভিযোগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।এ ধরনের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।